তাকদির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। নাস্তিকদের অপপ্রচারের জবাব চাই -সোহানুর রহমান। নারায়ণগঞ্জ থেকে।
উত্তরঃ ভাবতেও অবাক লাগে, যখন দেখি বাংলাদেশের যুদ্ধের ইতিহাস মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে জানতে চাচ্ছে! আচ্ছা নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বলুন তো তাদের পক্ষে কি ঘুণাক্ষরেও সম্ভব সঠিক ইতিহাস জানা!
আপনার কী মনে হয় নাস্তিকরা সম্পূর্ণ ধর্মীয় একটি বিষয়কে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করবে? এমন ইতিহাস ঘটার কল্পনা করা যায়!
আপনি তো কোরআন-হাদিসের পুরোটা জানেন না। আপনাকে একটি আয়াত দেখিয়ে তারা বলবে, দেখছো কোরআন এটা বলছে, হাদিস এটা বলছে, অথচ কোরআন-হাদিসেরই আরেক জায়গায় এর বিস্তর ব্যাখ্যা রয়েছে। এমন কি অনেক হাদিস এমনও রয়েছে, যেগুলোকে রাসূল সা. 'মানসূখ' তথা রহিত বলে গেছেন । যা তারা আপনাদেরকে কস্মিনকালেও দেখাবে না।
অতএব যে দেশের ইতিহাস সে দেশের কাছ থেকে জানাটাই যৌক্তিক। শত্রুদেশের থেকে নয়।
'তাকদির' ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার সাথে বান্দার শুধুমাত্র বিশ্বাসের সম্পর্ক। কর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তাকদির সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ
১/ তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে। এবং এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ। (আল হাজ্জ্ব - ৭০)
২/ তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। (আল আনআম - ৫৯)
এ আয়াতদুটিতে তাকদির সম্পর্কে আল্লাহ খুব পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ এই মহাবিশ্বের খুটিনাটি সবকিছুই জানেন। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সমস্ত অদৃশ্যের খবর তাঁর কাছে আছে। এবং তিনি এগুলো লিপিবদ্ধ করেও রেখেছেন। আর এটা আল্লাহর কাছে একেবারেই সহজ। কমন নলেজ।
এই ক্ষমতাই যদি না থাকে তাহলে স্রষ্টা তো পরের কথা, একজন আবিষ্কারককেও আমরা তার আবিষ্কার সম্পর্কে সন্দেহ করবো। অতএব মহান স্রষ্টার তার সৃষ্টির সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা থাকাটা আবশ্যক। না থাকাটা অযৌক্তিক।
এতটুকু নাস্তিকরা মেনে নেয় যে, আল্লাহ মহাবিশ্বের সবকিছুর সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তিনি আগে থেকেই সবকিছু জানেন। এবং তা লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধও রয়েছে। কিন্তু এরপর তারা নিজ সার্থ উদ্ধারে যে অংশটুকু যুক্ত করে তা হলো, 'আল্লাহই আমাদেরকে দিয়ে ভালো-মন্দ যাবতীয় সবকিছু করান, এতে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। আমরা শুধুমাত্র রোবটের ভূমিকা পালন করছি।' এই অংশটুকু যুক্ত করেই তারা বিভিন্ন সংশয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এই অংশটুকু কখনোই তারা প্রমাণ করতে পারবে না। বরং তারা যে মিথ্যাবাদী এটা প্রমাণ করা খুবই সহজ।
কারণ আল্লাহ নিজেই এই ধরণের দাবিদারকে আল্লাহর নামে মিথ্যাচার করার ব্যাপারে অবিযুক্ত করেছেন।
{এখন মুশরেকরা বলবেঃ 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা (শিরক করতো)। আর না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম'। একই ভাবে তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল।} (আনআম-১৪৮)
তারা যে কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন কথাকে কাট করে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফিট করে আল্লাহর উপর দোষ দিতে চাচ্ছে যে, আল্লাহ না চাইলে এগুলা কিছুই তারা করত না। 'শাস্তি থেকে রেহাই পেতে তারা যে এই মিথ্যা অযুহাত করবে' তা আল্লাহ আগে থেকেই জানেন। এমনকি
পূর্ববর্তী অস্বীকারকারীরাও এরকম দাবি করেছিল।
তাকদির আল্লাহ লিখে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে, এই লেখার এফেক্টে মানুষ সেই কাজগুলো করবে। বরং 'মানুষ করবে' এটা আল্লাহ জানেন তাই লিখে রেখেছেন। উপরের আয়াতে স্পষ্টভাবে তিনি উল্লেখ্য করেছেন 'তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে'। তারপরই বলেছেন 'এবং এসবকিছু কিতাবে লিখিত আছে।' আলহজ্ব- ৭০
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহ সবকিছু আগে থেকে জানেন বলেই তাকদির লিখে রেখেছেন। 'লেখার কারণেই ঘটছে' এমন নয়। যদি এমন হতো! তাহলে 'আল্লাহ সবকিছু আগে থেকেই জানেন' এই কথার কোন মানে রইল না। অথচ এটাই তাকদিরের মৌলিক বিশ্বাস।
আল্লাহ দুনিয়াতে কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন না। এমনকি কুফরি করার ব্যাপারটাও আল্লাহ তার স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
{বলুনঃ সত্য তো তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছেই। অতএব, এখন যার ইচ্ছা, ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফরি করুক। কারণ আমি তো জালেমদের জন্য (পরকালে) অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।}
(আল কাহফ-২৯)
মানুষকে আল্লাহর ব্যক্তি স্বাধীনতা দেয়ার ব্যাপারে হাজারো যুক্তি প্রামাণ আছে। আপনি যদি সত্যিই যুক্তিতে বিশ্বাসী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এটা মানতে বাধ্য। ধরুন, আপনি আপনার বেডরুমের ফ্যানের সুইজটা অন করে রেগুলেটরটা ফুল স্পিডে বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার দেয়া নির্দিষ্ট কন্ট্রলে চলছে
'ফ্যানটার নিজের কোন ক্ষমতা নেই এদিক-সেদিক করার' এটা আপনি জানেন, তা সত্বেও কি আপনি ফ্যানকে উদ্দেশ্য করে বলবেন!? যে, 'এই ফ্যান তুমি আস্তে চল কিংবা আরও জোরে চল।' বলবেন না। কারণ, আপনি ফ্যানকে তার স্বাধীনভাবে চলার ক্ষমতা দেন নি যে, ইচ্ছে হলে সে আপনার আদেশ মানবে আর ইচ্ছে হলেই অমান্য করবে।
কিন্তু আল্লাহ মানুষকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই হাজারো বিধিনিষেধ জুড়ে দিয়েছেন। যদি তাকদিরে লেখার বিষয়টি 'আপনাদের নাস্তিকদের দাবি অনুযায়ী হত', তাহলে কোরআনে খামোখা এত আদেশ নিষেধ আসতো না। অতএব এটা মেনে নেয়া আবশ্যক হচ্ছে যে, আল্লাহ সবকিছু আগে থেকে জানেন বলেই তাকদির লিখে রেখেছেন। লেখার কারণে সব অটোমেটিক ঘটছে না।
আল্লাহ কখনো কারো থেকে এই স্বাধীন ক্ষমতা নিয়ে নেন। যেমন পাগলের, কাহফবাসীদের ইত্যাদি। পাগলের বিবেগ বুদ্ধি নেই, ভালো মন্দ বুঝে নিজের মতামত দেয়ার ক্ষমতা নেই এজন্যই তাকে তার কৃতকর্মের জবাবদিহি করতে হবে না। কাহফবাসীদের আল্লাহ দীর্ঘ সময় ঘুমের মধ্যে রেখেছেন এতে বান্দার কোন কন্ট্রোল ছিল না। তাই এই দীর্ঘ সময়ে যত ইবাদাত তাদের থেকে ছুটে গেছে সে সম্পর্কে তাদের জবাবদিহি করতে হবে না। শুধুমাত্র এ কারণে যে, তখন তাদের কন্ট্রোল তাদের কাছে ছিল না বলে।
এমনকি ভুলেও যদি কেউ কোন কাজ করে ফেলে তাকেও সে কাজের জন্য দায়ি করা হবে না। এবং জবাবদিহিও করা লাগবে না। যেমন রোজা রেখে যদি কেউ ভুলে পানি পান করে ফেলে তাহলে তার রোজা নষ্ট হয় না। (বুখারী ; ১৯৩৩)
অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া স্বাধীনতা মানব তৈরি স্বাধীনতার চেয়ে অনেক নিখুঁত। মানুষ নিজে করলেও শুধু বাহ্যিকটা দেখে আল্লাহ রায় দেন না, বরং ওই কাজে তার ইচ্ছার স্বাধীনতা ছিল কি না সেটাও দেখেন। অথচ নাস্তিকরা দাবি করছে বান্দার কোন ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই। সত্যিই আশ্চর্যজনক!
তাকদিরকে বিতর্কিত করার জন্য নাস্তিকরা কিছু রেফারেন্স দিয়ে থাকে।
১/ এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
[সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭]
২/আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন।
[সূরা কাসাস, আয়াত: ৬৮]
এই ধরণের কিছু আয়াত দিয়ে তারা বুঝাতে চায় যে, পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে তা আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে। যেহেতু সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর হুকুমেই হচ্ছে। অর্থাৎ আমি যে অন্যায় করছি, জিনা ব্যভিচার, খুন ইত্যাদি করছি, তা তো আল্লাহর আদেশেই করছি। তাহলে কেন তিনি এর কারণে আমাদেরকে শাস্তি দিবেন?
প্রথমেই আমরা জেনে নিব যে, আমরা কি সমস্ত অপরাধ আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর আদেশেই করছি?
সয়ং আল্লাহ এ সম্পর্কে আমাদের বলছেন,
{তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং 'আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন'। (হে মুহাম্মদ) আপনি বলে দিন, 'আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না।' এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না। } (আল আরাফ-২৮)
অজ্ঞতা যে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। আজ নাস্তিকরা এ কারণেই সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন,'তিনি মন্দ কাজের আদেশ দেন না।' এও বলেছেন যে, বাঁচার জন্য তারা আল্লাহর উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। মিথ্যা আরোপ করে।
অবাক লাগে! এরপরও কিভাবে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
দ্বিতীয়ত আল্লাহর ইচ্ছাই সবকিছু হয়। আল্লাহ ইচ্ছা না করলে কোনকিছুই হত না। আল্লাহর ইচ্ছা আছে বলেই আমরা নিজেদের স্বাধীনতায় চলতে ফিরতে পারছি। এর মানে এই নয় যে, আল্লাহই সবকিছুর জন্য দায়ি। কারণ ইচ্ছা বলতেই আমরা শুধু কামনা, বাসনা বুঝাই না। ইচ্ছার আরেকটা অর্থ হলো- অবকাশ।
যেমন- চেয়ারম্যান সাহেব একদমই ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন না। কিন্তু তারই বাড়ির মাঠে প্রতিদিন এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। এখানে আমি বলতে পারি যে, চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা আছে বলেই তারা তার বাড়ির মাঠে খেলতে পারে। তিনি যদি না চাইতেন তাহলে তাদের পক্ষে সেই মাঠে খেলা সম্ভব হত না। এখানে কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের ইচ্ছা মানে পছন্দ, কামনা, বাসনা নয় (কারণ তিনি খেলা পছন্দই করেন না) বরং অবকাশ।
অর্থাৎ সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়।কারণ বিশ্বজগতের সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ না চাইলে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দিয়েছেন অবকাশ কিছু সময়ের জন্য। এ কারণেই মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
{ জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো আল্লাহ ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। } (ইব্রাহীম- ৪২)
{ যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। } (আন নাহল-৬১)
এতএব মানুষ যে অন্যায় অবিচার করছে এগুলো আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত নিজেদের স্বাধীনতা আছে বলেই করছে। আল্লাহ যদি না চাইতেন তাহলে এগুলোও তারা করতে পারতো না। কিন্তু আল্লাহ তো মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। দেখিয়েছেন ভালো-মন্দ দুটি পথ। তাকে পরিক্ষা করার জন্য।এখন বান্দা যদি সেই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে বিপদগ্রস্ত হয়ে বলে- 'আমার কোন দোষ নেই। আল্লাহ আমাকে স্বাধীনতা, অবকাশ দিয়েছেন বলেই আমি অপরাধ করতে পেরেছি।' এরকম দু'মুখো সূলভ আপত্তির কোন মানে হয় না। ( একবার আপত্তি 'স্বাধীনতা নাই কেন'? এটা প্রমাণিত হয়ে গেলে আবার আপত্তি 'স্বাধীনতা দিয়েছে কেন'?)
কোরআনের আয়াত উপস্থাপন করে আরো একটি আপত্তি নাস্তিকদের পক্ষ থেকে আসে।
১/যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।(কোরআন ৭:১৭৮)
২/আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। (কোরআন ১৮:১৭)
অর্থাৎ আল্লাহই তো হেদায়েতের মালিক, গোমরাহ করার মালিক। যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন আর যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। এখানে আমাদের তো কোন হাত নেই।
হ্যা অবশ্যই, এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য এটা বুঝানো যে, হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কেউ হেদায়েত দিতে পারেন না। এমনকি সয়ং রসূল ও না। তবে এতে সংশয় ছড়ানোর কিছু নেই। কারণ সৃষ্ট সব কিছুই স্রষ্টার অধিনে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।
এখন আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করছি, আপনার টাকার প্রয়োজন। আর আপনি এও জানেন যে, আপনার বাবার কাছে টাকা আছে।
এখন আপনার কী কর্তব্য? নিশ্চয়ই বাবার কাছে টাকা চাওয়া। নাকি নিজে না চেয়ে 'বাবা দেয় না কেন' বলে বাবার ঘাড়ে দোষ চাপাবেন।
অতএব আপনি জানেন হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। আল্লাহর কাছে হেদায়েত আছে। এখন যদি আপনি হেদায়েত না চেয়ে আল্লাহকে দোষারোপ করেন, তাহলে এটা সম্পূর্ণ আপনার বোকামি। কেননা যার হেদায়েতের প্রয়োজন তাকে আল্লাহ হেদায়েতের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন -
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيم
(হে আল্লাহ) আমাদের সরল পথের দিকে পথ প্রদর্শণ করো।
(আল ফাতিহা - ৬)
এবং আল্লাহ অনেক জায়গায় বান্দাকে চাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন -
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। (আল মু'মিন-৬০)
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ কারো ঈমান নষ্ট করেন না।
{ আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।} (আল বাকারা- ১৪৩)
আর আল্লাহ গোমরা করেন তাদেরকে যারা আল্লাহর নিদর্শন পাওয়ার পরও তা গোপন করে। অর্থাৎ আল্লাহর অস্তিত্বকে জেনে বুঝে অস্বীকার করে। (আল বাকারা ১৫৯)
সুতরাং আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণেই তাদেরকে গোমরাহ করেন। এমনি এমনি নয়।
আর এটাই বাস্তবতা, কারণ ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগানো যায়। ঘুমের ভানকারী ব্যক্তিকে নয়।
আর আল্লাহ এও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, সত্য (হেদায়েত) বর্জন করলে তার ভাগ্যে মিথ্যা(গোমরাহি) ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
'অপশন দুটি' একটা রিজেক্ট করার পর অটোমেটিকলি অপরটা চুজিং হয়ে যায়।
{ অতএব, এ আল্লাহই তোমাদের প্রকৃত পালনকর্তা। আর সত্যের পরে গোমরাহী ছাড়া আর কী বা রয়েছে ? সুতরাং কোথায় তোমরা ঘুরপাক খাচ্ছো? }( ইউনুস -৩২)
পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, পথও দেখিয়েছেন। অতঃপর পরিক্ষা করছেন যে, কে এসমস্ত নেয়ামত স্রষ্টার ভেবে কৃতজ্ঞ হয় আর কে এক্সিডেন্ট, নিজের ক্রেডিট ভেবে অকৃতজ্ঞ হয়।
{আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।}
(আদ দাহর-২)
{আমি তাকে (দুটো) পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।} (আদ দাহ্র - ৩)
সত্যমনা লেখক-
Robiul Islam.
Nice post
উত্তরমুছুন