আমরা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর লেখা সত্যার্থ প্রকাশ থেকে দেখে নিবো যে তিনি কি বলছেন;
[সত্যার্থ প্রকাশ| অধ্যায় চার| পৃষ্ঠা ৮৪| স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী] “এ বিষয়ে স্ত্রী-পুরুষের স্মরণে রাখা আবশ্যক যে, বীর্য্য ও রজঃ অমুল্য পদার্থ। যে ব্যক্তি এই অমূল্য পদার্থকে পরস্ত্রী, বেশ্যা অথবা দুষ্ট পুরুষের সংসর্গে নষ্ট করে সে মহামুর্খ। কারণ কৃষক এবং মালী মুর্খ হইয়াও স্ব স্ব উদ্যান ব্যতীত অন্যত্র বীজ বপন করে না।
এখানে কৃষক হচ্ছে স্বামী এবং মালী হচ্ছে স্ত্রী। উদ্যান হচ্ছে স্ত্রীর গর্ভাশয় এবং বীজ হচ্ছে স্বামীর বীর্য্য। এককথায় স্ত্রীকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ ক্ষেতই হচ্ছে বীজ বপন করার একমাত্র মাধ্যম। একজন মুসলিম হিসেবে এ উদহারণটি আপনার নিকট খুব স্বাভাবিক মনে হইতে পারে। এবং আমাকে বলতে পারেন এখানে কোনো ভুল নেই। কিন্তু আমার মূল খন্ডন আপনাদের নিয়ে নয় বরং তাদের নিয়ে যারা সুন্দর একটি উপমাকে খারাপ ভাবে উপস্থাপন করে। অথচ এ উপমার সাথে খারাপের কোনো সংযোগ নেই। আর্যদের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং নিজেই এ উদহারণটি পেশ করেছেন। অথচ হিন্দুরা কীভাবে এটিকে গ্রহন করে ইসলামের উপর মিথ্যাচার করে আমার বুঝে আসে না।
অথর্ববেদ [১৪|২|১৪] বলা হয়েছে “হে পুরুষ [পতি]! তুমি এই উর্বরা নারীতে বীজ বপন করো। ঋষভের সমান তোমার বীর্যকে ধারণ পূর্বক এই যোনি সন্তান উৎপন্ন করুক”।
নারীতে বীজ বপন করা সম্ভব না। তাহলে এখানে বীজ বপন দ্বারা কি বুঝানো হচ্ছে? অবশ্যই বীজ বপনের জন্য কোনো মাধ্যম প্রয়েজন। সে মাধ্যম হচ্ছে ক্ষেত। আর নারীই হচ্ছে সে ক্ষেত। কারণ নারীর দেহ ক্ষেতের মতো কাজ করে। ক্ষেতের মাধ্যমে বীজের উৎপন্ন করা সম্ভব। সুতরাং সে ক্ষেতেই বীজ বপনের আদেশ দিচ্ছে ঈশ্বর। তুলষী রামের ভাষ্যে বলা হয়েছে “mature and fertile in health, has come to you as wife in whom you would plant the seed”। এখানে স্ত্রীর শরীরকে “সাস্থ্যে পরিপক্ক এবং উর্বর” বলা হয়েছে এবং তাতে বীজ বপনের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। আমরাও জানি পরিপক্ক এবং উর্বর জমিতে ফষল বপনে বীজ উৎপন্ন ভালো হয়।
মনুসংহিতায় [৯|৩৩] বলা হয়েছে “নারী শস্যক্ষেতের মতো, আর পুরুষ শস্যের বীজস্বরুপ। এই ক্ষেত্র ও বীজের সংযোগে সকল প্রাণীর উৎপত্তি”।
নারদ স্মৃতিতে [১২|১৯] বলা হয়েছে “নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে বংশবৃদ্ধি বা উৎপাদনের জন্য। স্ত্রী হচ্ছে ক্ষেত এবং স্বামী হচ্ছে বীজদাতা”।
পদ্ম পুরাণ ভূমিখন্ডে [১০|৮] বলা হয়েছে “পিতা বীর্য্য নিধায়ক এবং মাতা ক্ষেত্র [শস্যক্ষেত]।
একজন মুসলিম হিসেবে আপনার আর আমার নিকট এটি খুবই স্বাভাবিক উপমা হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু যারা নিজেদের শাস্ত্র নিয়ে জ্ঞান অর্জন করে না। ভাষার উপমা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না তাদের নিকট এটির কোনো তাৎপর্যই বহন করবে না। যে নারী সন্তান জন্ম দেয় এবং তাদের বুকে আগলে রাখে এবং যার বুকের দুধ পান করে সন্তান বেড়ে ওঠে। তাহলে চিন্তা করুন আমরা যদি সন্তানদের ফসলের সাথে মিলিয়ে দেখি একজন নারী কি তখন শস্যক্ষেতের ভূমিকায় থাকে না? শস্যক্ষেতের ভূমি থেকে যেমন চারাগাছগুলো পানিসহ যাবতীয় উপাদান গ্রহণ করে বেঁচে থাকে তেমনি মায়ের বুকের দুধ পান করে একজন শিশুও ঠিক সেভাবে বেড়ে ওঠে। সন্তানের জন্য মায়ের দুধ এবং ভরণপোষণ গুলো তো স্বামীই করে থাকেন। একজন কৃষকের নিকট তো তার শষ্যক্ষেতই সব। তাহলে কোরআনে বলা আমার শষ্যক্ষেতের এই উপমাতে ভুল কী আছে বলুন?
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো এবং নিজেদের আগামী দিনের জন্য ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় কর। জেনে রেখ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট হাজির হতে হবে আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও। [কোরআম ২ঃ২২৩]
একবার ইবনু উমার কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে তিনি যখন “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্রস্বরুপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো। তখন পাশের একজন সাহাবীকে ডেকে বললেন। নাফী এইমাত্র আমি যে আয়াত তিলাওয়াত করলাম সেটি নাযিলের প্রেক্ষাপট কি তুমি জানো? ইবনু উমারের প্রশ্নের জবাবে ওই সাহাবী বললেন “আমি জানি না”। তখন ইবনু উমার বললেন “আমরা স্ত্রীদের সাথে পেছনের দিক হতে সহবাস করতাম। কিন্তু যখন আমরা মদীনায় হিজরত করলাম এবং সেখানে যখন আমরা আনসারী নারীদের বিয়ে করলাম আমরা তাদের সাথেও একইভাবে মিলিত হতে চাইতাম। কিন্তু আনসারী নারীরা যারা একসময় ইহুদী ছিল তারা এটা পছন্দ করত না। তারা এতকাল মেনে আসা ইহুদী রীতিই মেনে চলতে চাইল। তখনই আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন যে তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্রস্বরূপ। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো।
এই আয়াত নারীদের ওপর পুরুষের অবাধ যৌন-কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি নয়। বরং ইহুদীদের মধ্যে প্রচলিত একটি কুসংস্কার উঠিয়ে দিতেই নাযিল হয়েছে। ইহুদীরা বিশ্বাস করত যে স্ত্রীদের সাথে পেছন দিক থেকে সহবাস করলে ট্যারা সন্তান হয়। এই কুসংস্কার দূরীকরণার্থেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করো। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যেভাবে ইচ্ছা সহবাস করো। একটি কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করতেই এই আয়াত নাযিল হয়েছে। এখানে নারীদের সাথে যখন যেভাবে ইচ্ছা মিলিত হওয়াটা অপ্রধান। মূলত কুসংস্কারের পতন ঘটানোই ছিল মুখ্য।
এখন হিন্দুরা আমাদের উপহাস করে বলতে পারে এটি অশ্লীল আয়াত। মূলত তাদের ধর্মীয় গ্রন্থতেই অশ্লীল বাণী রয়েছে
যজুর্বেদ [১৯|৮৮] বলা হয়েছে “যেমন একজন বীর্য গ্রহীতা স্ত্রী সহবাসের সময় তার মাথা স্বামীর মাথার বিপরীতে এবং তার মুখ তার স্বামীর মুখের বিপরীতে রাখে। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই একসাথে তাদের ঘরোয়া দায়িত্ব পালন করা উচিত। একজন স্বামী একজন চিকিৎসকের মতো রক্ষক। তিনি শিশুর মতো সুখে জীবনযাপন করেন এবং লিঙ্গের তীব্র উৎকণ্ঠার সাহিত প্রচন্ড প্রশান্তির সাথে বংশধর জম্ম দেয়
[Just as a wife, the recipient of semen, at the time of cohabitation keeps her head opposite to the head of the husband, and her face opposite to that of his, so should both husband and wife perform together their domestic duties. A husband is a protector like a physician. He lives happily like a child, and with tranquillity produces progeny with penis keen with ardour]
যজুর্বেদ [১৯|৭৬] বলা হয়েছে “পুরুষাঙ্গ প্রস্রাব নির্গত করে, কিন্তু যখন এটি নারীর যোনিতে প্রবেশ করে তখন বীর্য নির্গত করে”।
[The generative organ [Penis] releases urine, but when it enters the womb [Vagina], it releases semen]
[মন্তব্যঃ এদের ধর্মীয় গ্রন্থের একটি সুন্দর বাংলা অনুবাদ নেই [আর্যদের মতে]। যেগুলো রয়েছে সেগুলো দিলে আর্যরা বলে যে এ অনুবাদ গুলো ভুল। উপরের মন্ত্রটির অনুবাদ দেবী চাঁন্দের অনুবাদ থেকে গ্রহন করা। যিনি একজন আর্য। আমি এটিকে ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছি। তাই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজীও রেখেছি।]
সত্যমনা লেখক- আজিজুল হক।
সত্যমনা ডট কম।
সুন্দর হইছে। নাস্তিকদের প্রতি জবাব চাই ভাই।
উত্তরমুছুনজাজাকাল্লাহ খাইরান ভাই।
উত্তরমুছুনRight
উত্তরমুছুনভাই লেখাটা খুব ভালো লেগেছে,
উত্তরমুছুনতবে কিছু কিছু বিষয়ে আরো
বেশি গুরুত্ব
দেওয়া উচিত,,
প্রথমে নিজেই লিখলো মালি মানে স্ত্রী আবার লিখে স্ত্রীকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করা হয়েছে. ক্ষেত মালির সমার্থক শব্দ এটা কে বললো ? বাংলা না পারলে আরবিতে নিজের বক্তব্য লিখেন গিয়ে
উত্তরমুছুনভাই আপনি ভুল বুঝেছেন। এখানে, দুই ধর্মে "স্ত্রী" কে কিসের সাথে তুলনা করা হয়েছে তা বলা হয়েছে। হিন্দুধর্মে তাকে "মালি" আর ইসলামে "শস্যক্ষেত"। হিন্দুধর্মে কি বোঝাতে চেয়েছে তা বুঝতে পারিনি কিন্তু ইসলামে উক্ত কথাটি মূলত একটা উপমা। এ বিষয়ে আরিফ আজাদ ভাইয়ের 'জবাব' বইটায় পুরোপুরি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ লেখা আছে।
মুছুন