হাতের নাগালেই পরিসংখ্যান আছে,, লুপাছুপার সুযোগ নেই বলেলই চলে। পরিসংখ্যান থেকেই একজন শিক্ষিত লোকের বুঝে নেয়া উচিৎ কারা সভ্য আর কারা অসভ্যজাতী।
প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা উচিত, ধর্ষণ বিষয়টা সবার জন্য সমপর্যায়ীও মাথা ব্যথার কারণ নয়। মানে ধর্ষণের অপরাধটা অনেক সাংস্কৃতিক লোকদের কাছেই হাবভাবে কিছুটা ভারিক্কির আভাস মিললেও মূলত অত্যন্ত লঘু ও সাধারণ একটি অপরাধ।
ব্যথা যার বেশি, সারিয়ে তুলার তোড়জোড়ও তার ততখানি। পশ্চিমা বিশ্ব ও মুক্তচেতা স্বাধীনাদের কাছে এটা স্রেফ ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এর বেশি কিছু নয়। সম্মতি থাকলেই সাত খুণ মাফ। অতএব তাদের কাছে ধর্ষকের শাস্তি হয় মূলত ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার কারণে, নারীর সতিত্ব সম্ভ্রমের ভেলু নেই তাদের কাছে। যারা জনে জনে তা বিলিয়ে বেড়ায় তাদের কাছে ভেলু না থাকাটাই স্বাভাবিক।
কারণ ক্ষানিক বাদে এই ধর্ষিতা নারীই যদি বলে উঠে, 'তার কোন দোষ নেই, এতে আমার সম্পূর্ণ সম্মতি ছিল। তাহলেই আমাদের অতি আধুনিকতাবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে উক্ত ধর্ষক এবং ধর্ষিতা নির্দোষ হয়ে যায়। তাহলে একে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মামলা না বলে ধর্ষণের মামলা বলি কী করে!? যার ফলশ্রুতিতে ৭২ হাজার টাকা কিংবা ২/৩ বছরের জেল, শাস্তি হিসেবে আসলেই বেশি বৈকি,,।
আবারো বলছি! 'ব্যথা যার বেশি, সারিয়ে তুলার তোড়জোড়ও তার ততখানি।' এজন্যই আমারা লক্ষ্য করি- তথাকথিত আধুনিকতাবাদী এবং তাদের অনুসারীদের এক্ষেত্রে কেন এত ঢিলামি, অন্যদিকে এও বুঝার বাকী থাকে না যে, কেন ইসলামিক আইন এক্ষেত্রে এত কঠোর।
আমাদের সমাজে ধর্ষককে নিয়েই যত মাথা ব্যথা। ধর্ষণ নিয়ে নয়। বিষয়টা এমন যে, ধর্ষণ হওয়ার পর কেউ বাঁচতে পারবে না। শাস্তি ভোগ করতেই হবে। (যদিও তা অতি নগণ্য)। অথচ একজন মানুষ ধর্ষণ কেন করে? ধর্ষিতা কেন হয়? ধর্ষণের প্রতি আহবায়ক কারণ উদঘাটন করে সমস্যাটা গোড়া থেকে উপরে ফেলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না বা করতে চায় না আমাদের সমাজ।
কারণ এটা করতে গেলে যে, ধর্ষণের রেংকিং-এ শীর্ষে থাকা পশ্চিমা বিশ্বের সব নির্লজ্জাপণা ও অপসাংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। অথচ আমাদের অতি আধুনিকতাবাদীরা এতে বেজায় নারাজ। তাই ভেতরটা না ঘেটে যতটা তোড়জোড় দেখানো যায় আরকি।
যেই জাতি মনে প্রাণে চায়, ধর্ষণ সমাজ থেকে একেবারেই ঘুচে যাক, দুইটা কাজ করা সেই জাতির জন্য আবশ্যক।
১/ ধর্ষণের অত্যান্ত কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা।
২/ ধর্ষণের প্রতি আহবায়ক কারণ উদঘাটন করে সেগুলো প্রতিহত করা।
অথচ দুঃখ জনক হলেও দুটোর একটাও নেই আমাদের সমাজে।
দু-একটা ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যাদের আন্দোলন সীমাবদ্ধ। যারা শুধুমাত্র ঘটনা ঘটার পর একটু হইচই করেই ধর্ষণ নির্মূল করার স্বপ্ন দেখে, তারা মূলত 'গোড়া কাটা গাছের আগায় পানি ঢালার মতো বোকামি করছে।
ধর্ষণের অন্যতম কারণ, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। যার জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় শিক্ষা নৈতিকতা শেখায়। শেখায় মানবতা।
অন্যায়ের প্রতি শুধু ঘৃণা জন্মানো নয়, বরং অন্যায় করার ব্যপারে ভয়ও করতে শেখায়। যা অন্য কোন শিক্ষা দিতে অপারগ।
একজন মানুষকে ভালো মানুষরূপে গড়তে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখে ধর্মীয় শিক্ষা ও মার্জিত পরিবেশ, যার মূল্যায়ন আমাদের কাছে নাই।
যার দরুন ভালো মানুষের খুব অভাব। পরিবর্তে অমানুষের ছড়াছড়ি। যার প্রভাব সমাজে পরিস্ফুট।
ধর্ষণের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ্য করা যায়, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড। তথাকথিত কিছু নারীবাদী ও মুরগীখেকো শিয়ালের দলেরা নারী স্বাধীনতার নামে যেই অশ্লীলতা ও অশালীনতার ছয়লাব ছড়াচ্ছে সমাজে। যা একজন অসহায় নারীর জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে।
তারা 'স্থান, কাল, পাত্র' বোধের মাতা খেয়ে, যেখানে যা ইচ্ছা তাই করার অযৌক্তিক দাবি নিয়ে অসুস্থ মনের মানুষগুলোকে আরও বেশি উশৃংখল করে দিচ্ছে। অাত্মপ্রবৃত্তি মেটানোর উদ্দেশ্যে, নিজেদের নৈতিক চুরান্ত অবক্ষয়ের পরও সমাজে বুক ফুলিয়ে টিকে থাকার জন্য অতি নিকৃষ্ট নোংরামি আর নষ্টামিকে বৈধ করে নেয়ার ধান্দায় মত্ত রয়েছে। যেমন পতিতাও চায় তার অতি নিকৃষ্ট নোংরামিকে সমাজ প্রমোট করে তাকে তারকার আসনে বসাক। যাতে সে তার এহেন কাজের জন্যও বাহ্ বাহ্ কুড়াতে পারে।
নারী পুরুষের মাঝে যে, আল্লাহ প্রদত্ত চুম্বকীয় একটা জৈবিক চাহিদা রয়েছে। যা সবসময় একে অপরের প্রতি আকর্ষণ করে। (যা বৈজ্ঞানিক ভাবেও ১০০% প্রমাণিত) এটার যে, একটা নির্ধারিত লিমিটেশন থাকা প্রয়োজন। না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই চরম বাস্তবতা গুলো রীতিমতো অস্বীকার করে যুক্তিবাদী দাবিদার তথাকথিত আধুনিকতাবাদীরা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
এই লিমিটেশন না থাকার কারণে অবাধ মেলামেশার ফলে যেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে তারই অপর নাম ধর্ষণ।
প্রত্যেকটি জায়গায় আজ নারীকে ভোগ্য পণ্য, বিজ্ঞাপনের বস্তু হিসেবে উল্লেখ্য করা হয়। রিসিভশন থেকে নিয়ে সর্বত্র নারীকে এমন ভাবে তুলে ধরা হয় যেন নারী কেবল উপভোগের বস্তু।
এর মৌলিক উদ্দেশ্য থাকে, কোন কাস্টমার যাতে এই নারীর (উপভোগের) টানে হলেও তাদের দোকানে (প্রতিষ্ঠানে) আসে।
আপনি মানুষকে বিভিন্ন পন্থায় উসকে দিবেন। আর সাধু সেজে বলবেন তোমার মনকে ঠিক করো। এটা তো এমন হলো যে, বেড়ালকে শুটকি দেখিয়ে ঢেকে এনে 'শুটকি খাওয়া না জায়েজ' বলে নসিহত করা।
শুধুমাত্র মন ঠিক করার নসিহত করে যারা বলে- 'নারীদের এত নিরাপত্তা নেয়া লাগবে কেন? কেন তাদের এত কিছু করতে হবে? সমস্ত পুরুষের মন ঠিক করে ফেললেই তো হয়।' তাদেরকে বলি; জুতা আবিষ্কারের একটা গল্প কথিত আছে।
একজন রাজা মন্ত্রীদের বলেছিলেন, আমি যখন রাস্তায় বেরহবো আমার পায়ের নিচে কাটা ইত্যাদি পড়তে পারে, তো কী করা যায়। তখন কেউ কেউ বলেছিল - তাহলে একদল ঝাড়ুদার নিয়োগ দেয়া যায়। আপনি যেখানে যেখানে যাবেন তারা সামনে সামনে ঝাড়ু দিতে থাকবে। তখন কিছু লোক বললো - রাজা সাহেব এতে তো সমাধান অনেক কঠিন হয়ে গেল। সারা দুনিয়া ঝাড়ু দিয়ে বেড়াতে হবে। এর চেয়ে ভালো হয় আপনি নিজের পা কোন কিছু দিয়ে আবৃত করে ফেলুন তাহলে আর এত কষ্ট করা লাগলো না।
আধুনিক যুগে এসেও আধুনিকতাবাদীরা এতটুকু কমনসেন্স রাখে না যে, সারা দুনিয়ার মানুষের মন ঠিক করা বেশি সহজ (আদৌও কি সম্ভব) নাকি নারীরা নিজেদের ঢেকে সংরক্ষণ করে চলবে, এটা বেশি সহজ!?
আর কথিত প্রগতিশীলরা নারীদেরকে খুবই সস্তা বানিয়ে ফেলেছে। এতটাই সস্তা যে, টাকা-পয়শা সোনা-গোহনাকে চুরি ডাকাতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সিন্দুক, তালা, সিসি ক্যামেরা, প্রহরী, দারোয়ান, পুলিশ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। এখানে কেন এটা বলছে না যে, এত কষ্ট করে কী লাভ, আমরা সবাই নিজেদের মনকে ঠিক করে ফেললেই তো হয়। কারো সম্পদের দিকে নজর না দিলেই তো হয়। এক্ষেত্রে তো এই ধরনের কথা বলতে জীবনেও শুনিনি সেই প্রগতিশীলদের কাছ থেকে!! এহেন লোকদেরকেই বলা হয়, 'জাতে মাতাল তালে ঠিক।'
আসলে তাদের কাছে নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন (ধর্ষণ) টা চুরি ডাকাতির চেয়েও কম ক্ষতিকর। কম গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামও সর্বপ্রথম পুরুষদের মনকে সংযত করার নির্দেশ দিয়েছে, চক্ষু অবনত রাখার মাধ্যমে। দিয়েছে লজ্জাস্থান হেফাজত করার নির্দেশ। সাথে সাথে মহিলাদেরকেও।
কিন্তু কোমনসেন্স হলো - পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ভালো হবার নয়। কেউ কেউ অসুস্থ মনের হবেই।
আর ক্ষতির আশঙ্কা যেহেতু মহিলাদের উপরই সেহেতু যথেষ্ট সেইফটির জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে ইসলাম। ফলে তারা-
* অসুস্থ মনের মানুষগুলোর কুনজর থেকেও হেফাজত থাকে। এবং
* অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার কারণে সুস্থ মানুষগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে না।
সত্যমনা লেখক- রবিউল ইসলাম।
সত্যমনা ডট কম।
COMMENTS