হিজাব ইসলামে অপরিহার্য নয় - ভারতের আদালতে রায়।
ভারতের কর্নাটক রাজ্যের হাইকোর্ট মঙ্গলবার (১৫ মার্চ ২০২২) এক রায় ঘোষণা করে বলেছে- মেয়েদের হিজাব পরা কখনোই ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়।
(১৫ মার্চ ২০২২) |
যদি আমরা কর্নাটক রাজ্যের হাইকোর্টের এই গাজাখোরী রায় মেনেও নেই যে হিজাব ইসলামে অপরিহার্য ধর্মীয় কোন বিষয় নয়।
তবুও কি রাষ্ট্র মেয়েদের পোশাকে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে!? সেক্যুলার রাষ্ট্রের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা কি তাহলে এটাই!
মেয়েরা যদি পোশাক না পড়ে উলঙ্গ কিংবা অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে স্কুলে-কলেজে যায় অথবা রাস্তায় বের হয়। তাহলে না হয় শালীনতার দোহাই দিয়ে পোশাক পড়ার আইন করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা নিজেদের সম্ভ্রমরক্ষার জন্য যদি শালীন পোশাক পড়ে তাহলে রাষ্ট্র সেই পোশাক খুলে ফেলতে চায় কোন যুক্তিতে! কিসের ভিত্তিতে! এটা তো জোর করে উলঙ্গ করার নামান্তর।
এখন আসি আদালতের রায়ের ব্যাপারে;
এটা যে গাজাখোরী একটা রায় এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা রায়ে বলা হয়েছে মেয়েদের হিজাব পরা ইসলাম ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়। ইসলাম ধর্মে কোনকিছু অপরিহার্য কিনা তা কি সেক্যুলার রাষ্ট্র ঠিক করবে নাকি উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ঠিক করবে?
তাহলে ইসলাম যে বিষয়টাকে অপরিহার্য সাব্যস্ত করছে তারা কী করে সেটাকে অপরিহার্য নয় বলে দাবি করছে। তারা যে এই দাবি করেছে। দাবীর পক্ষে কোন রেফারেন্স দিতে পারেনি। পারবেও না। দলিল প্রমাণহীন একটা দাবীর পক্ষে কীভাবে রায় আসে সেটাই আমাদের বোধগম্য নয়!
শুধুমাত্র গায়ের জোরে, ক্ষমতার জোরে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র মুসলিম মেয়েদের শরীর থেকে হিজাব খুলে নিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে নারীদের মৌলিক অধিকার। ধর্ম পালনের স্বাধীনতাটুকু। এটাই হলো রাষ্ট্রীয় ধর্ম সেক্যুলারিজম হওয়ার তাৎপর্য। এটাই হলো উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নগ্নরূপ।
এখন আমরা দেখবো - ইসলাম ধর্মে যে হিজাব একটি অপরিহার্য বিধান তার দলিল-প্রমাণ ;
আরবি: حجاب, হিজাব হলো;
একটি নেকাব যা মাথা এবং বুক আবৃত করে থাকে, এবং যা নির্দিষ্টভাবে বয়ঃসন্ধি বয়স থেকে মুসলিম নারীদের কর্তৃক পরিহিত হয় তাদের পরিবারের বাহিরের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রত্যক্ষতা এড়াতে এবং কিছু ব্যাখ্যা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক অ-মুসলিম মহিলারাও এটি পরিধান করে থাকে। - উইকিপিডিয়া।
হিজাবের মাধ্যমে নারীরা যে অংশটুকু ঢেকে রাখে যেমন মাথা, চুল, বুক, গলা ইত্যাদি তা পর্দার অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম ধর্মে নারীদের জন্য পর্দা ফরজ অপরিহার্য। নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত যেমন অপরিহার্য পর্দাও তেমন অপরিহার্য।
সুরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘ আপনি নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ও নিজেদের দেহ-সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, কেবল সেসব অংশ ছাড়া যা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
আর যেন তারা তাদের মাথার কাপড় দিয়ে বুকের ওপরটা ঢেকে রাখে এবং তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে শুধুমাত্র তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র,নিজ অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তারা ব্যতীত।
আর তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণ না করে। হে মুমিন লোকেরা ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে।’ (সূরা আন-নূরঃ ৩১)
আল্লাহ্ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাদেরকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।’ (সূরা আহযাবঃ ৫৯)
হাদীসে পর্দা সম্পর্কে...
হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন (মানব) শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন। (কেউ বলতে পারলেন না)
অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে আমি দেখিনি (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে)। এক. এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, আর সেই চাবুক দিয়ে তারা (অন্যায়ভাবে) মানুষকে প্রহার করবে।
দুই. এমন নারী, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও নগ্ন। তারা অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। (মুসলিম: ৫৪৪৫)
পর্দার বিধান ইসলাম ধর্মে এতটাই স্পষ্ট যে সমস্ত গণমাধ্যমে এর (ফরজ) অপরিহার্য হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ্য রয়েছে।
এমনকি উইকিপিডিয়াতেই উল্লেখ্য আছে-
পর্দা প্রথা হচ্ছে মুসলিম জনসমাজে প্রচলিত একটি প্রথা। এটি ইসলাম ধর্ম কর্তৃক সমর্থিত। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক ইসলাম প্রধান দেশে পর্দার প্রচলন রয়েছে। এটা পুরুষ ও নারী সবার জন্য ফরজ। -উইকিপিডিয়া।
তারপরও কী করে আদালত এমন গাজাখোরী রায় দিলো-
ভারতের একটি আদালতের এক রায় অনুযায়ী, হিজাব পরা হয়তো মুসলিমদের সংস্কৃতির অংশ হতে পারে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা যায় এর সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।
এই রায়টি দিয়েছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ। এই রাজ্যের সরকার স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছিল, আদালত সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে এই যুক্তিতে যে ইসলামে হিজাব পরার কোন 'বাধ্য-বাধকতা' নেই। [BBC News, বাংলা]
এবং আদালত আরও মন্তব্য করেছে যেহেতু হিজাব ইসলামে অপরিহার্য নয় সেহেতু ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ২৫-এ যে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেয়, হিজাব পরার বিষয়টি তার আওতায় পড়ে না।
সত্যমনা লেখক, রবিউল ইসলাম।
সত্যমনা ডট কম।
COMMENTS