প্রশ্নঃ আল্লাহ যদি রিজিকদাতা হোন তাহলে কাফের-মুশরিকদের কেন রিজিক দেন?
উত্তরঃ খুবই আলোচিত একটি প্রশ্ন এটি। কিন্তু একেবারেই সিম্পল।
হ্যাঁ, উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো যেমন ঘটে, হুবুহু তার বিপরীতও কিন্তু ঘটে।
যেমন একজন কাফের ক্ষুদার্ত, আর মুমিন ব্যক্তি পেট পুরে খাচ্ছে। আরেক জন কাফেরের কুড়ে ঘর, অথচ মুমিনের দশতলা বাড়ি।
এগুলো হচ্ছে মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে আমাদের যার যার অবস্থান। ঈমান-কুফরীর বিবেচনায় নয়।
ইহুদী,খ্রীষ্টান, হিন্দু, মুসলিম, আস্তিক, নাস্তিক আমরা সকলেই কিন্তু মানুষ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন মানুষ হিসেবে। তার ইবাদত করার লক্ষ্যে। আর তা মূলত পরিক্ষার মাধ্যমে।
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَالۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ
যিনি সৃষ্টি করেছেন জীবন ও মরণ তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে,কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। [১]
সুতরাং পৃথিবীটা পরিক্ষার হল। আর পরিক্ষার মধ্যে প্রত্যেকেই সমান। প্রত্যেকেই আল্লাহর দেয়া দুনিয়ার নীতি অনুযায়ী চলবে। সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এখানে ঈমান-কুফরির বিবেচনা করা হইনি। বরং প্রত্যেকের জন্য দুনিয়ার নীতি সমান। পৃথিবীতে যে যত বেশি চেষ্টা-সাধনা করবে, সে ততবেশি উন্নতি সাধন করবে। এখন সে মুমিন হোক কিংবা কাফের। কেননা
ঈমান আনার প্রতিদান তো মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে পাবে না। তার জন্য রয়েছে ‘প্রতিদান দিবস’ অনুরূপ কুফরির শাস্তিও পাবে একজন কাফের ঐদিনই। [২] (তবে আল্লাহ যদি কাউকে দুনিয়াতে দিতে চান দিতে পারেন। সেটা ব্যতিক্রম।)
পৃথিবী চলবে সম্পূর্ণ অাপন গতিতে। যেমনটি আল্লাহ পৃথিবীর নিয়ম নির্ধারণ করে রেখেছেন। এখানে এমন হবে না যে একজন মানুষ মুমিন হয়েছে বলে তাকে রাতারাতি ধনী বানানো হবে। কিংবা কেউ কাফের হওয়ায় ফলে গরীব হয়ে যাবে। এসবের প্রতিদান কিংবা শাস্তির জন্য নির্দিষ্ট সময় ও স্থান আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। না হলে তো আর পরিক্ষাই হলো না।
আর কাফের-মুশরিকদের যদি আল্লাহ রিজিক না দেন তাহলে তারা দুনিয়াতে বাচঁবে কী করে? আর না বাচঁলে পরিক্ষাই বা দিবে কী করে? কুফরি করছে বলে আল্লাহ দুনিয়াতে রিজিক বন্ধ করে কেন দিবেন? সে যদি মৃত্যুর পূর্বে ঈমান এনে ফেলতো? কেননা আল্লাহ তো মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত (সুযোগ) অবকাশ দিয়েছেন।
وَلَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰہَ غَافِلًا عَمَّا یَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ ۬ؕ اِنَّمَا یُؤَخِّرُہُمۡ لِیَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِیۡہِ الۡاَبۡصَارُ ۙ
জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে। [৩]
আল্লাহ ‘শুধু মানুষ নয়, প্রত্যেকটা প্রানীর জন্যেও নির্দিষ্ট পরিমান রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর তা আস্তিক নাস্তিক ভেদে নয়।
তবে আল্লাহ কখনো কখনো মূল পরিক্ষা ছাড়াও (এক্সট্রা) নির্দিষ্টকিছু মানুষকে বিভিন্নভাবে পরিক্ষা করেন ‘নৈকট্য হাসিলের জন্য’। যেমন করেছিলেন ইব্রাহিমকে (আঃ)। তেমনিভাবে আল্লাহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি, শারিরীক ক্ষতি ইত্যাদির মাধ্যমে পরিক্ষা করেন। যারা এ পরিক্ষাগুলোতে যত বেশি অগ্রগামী হতে পারবে। তারা আল্লাহর ততবেশি নৈকট্য হাসিল করতে পারবে।
اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَاَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَاللّٰہُ عِنۡدَہٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ
তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষাস্বরূপ। (এর বিনিময়ে) আল্লাহর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার। [৪]
সত্যমনা লেখক, Robiul Islam, পেইজ- সত্যমনা ও নাস্তিকতার মূলোৎপাটন।
তথ্য সূত্রঃ
[১] সুরা মুলক-২
[২] মুরসালাত- ১৩। আয যুখরুফ-৬৫।
ছোয়াদ- ১৬।
[৩]সুরা ইব্রাহিম-৪২
[৪]আত তাগাবুন- ১৫
COMMENTS