ইরানে হিজাব খুলে আন্দোলন। আর বাংলাদেশে শাহবাগিদের আস্ফালন।
ইরানের হিজাব ইস্যুতে শাহবাগিদের অপতৎপরতা নিয়ে তিনজন জনপ্রিয় লেখকের প্রতিক্রিয়া।
( সত্যমনা লেখক আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক)
সম্প্রতি ইরানে কিছু মৌলবাদী সেকুলার ও উগ্র নারীবাদী হিজাব বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। এতে শাহবাগিদের আনন্দে আন্দোলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, যারা মূলত রাস্তায় নেমেছে তারা আগে থেকেই হিজাব বিদ্বেষী ছিলো।
শুনেছি ঠিকঠাক হিজাব না পড়ায় ইরানের পুলিশ একটি মেয়েকে গ্রেফতার করে৷ পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাই মৌলবাদীরা হিজাব বিরোধিতায় নেমেছে।
প্রশ্ন হলো, অন্যায়ভাবে নাগরিক হত্যা করে থাকলে সেটার জন্য তারা রাস্তায় নামতেই পারে। কিন্তু হিজাব কি দোষ করলো?
হিজাব না পড়ার কারণে তাকে পুলিশ মেরেছে। তাই হিজাব হঠাতে হবে? এই তো?
বিষয়টা তাহলে এমন হলো, কেউ গণতন্ত্র বা সেকুলারিজম না মানায় তাকে যদি রাষ্ট্রের পুলিশ সাজা দেয়। তাহলে গণতন্ত্র ও সেকুলারিজম হঠাতে আন্দোলনে নামতে হবে?
আবার ধরুন, কেউ সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দিলো। সংবিধান লঙ্ঘন করলো। তাকে পুলিশ ধরে কিছু উত্তমমধ্যম দিলো। এতে করে ওই ব্যক্তি মারা গেলে। তাহলে জনগণের করনীয় হবে সংবিধান হঠানোর আন্দোলনে নামা? হায় শাহবাগি! হায় নারীবাদী!!
( রাফান আহমেদ)
ইরানে নাকি ঠিকমত বোরকা না পড়ায় পিটানো এক নারীকে পিটানো হয়েছে।* এতে শাহবাগীগণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত। আহ! শাহবাগীগণ কত্ত ভালো এমন ভাবনা ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে যাচ্ছিলাম, বাট মাঝপথে ঢেকুরটা আটকে গেল।★
মনে পড়লো ঠিকমত নামায পড়ার অপরাধে (!) শিবির ট্যাগ দিয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র পিটানো খুব কমন এইদেশে। বোরকা/নিকাব পড়ার কারণে বৈষম্য, নিগ্রহের শিকার হওয়া অনেকবার দেখেছি। অজস্র শাহবাগীকে দেখেছি আবরার কিবা জাহিদকে পিটানো সমর্থন করতে। বোরকাকে ডাস্টবিনের সাথে তুলনা করতে, নিকাব পরিহিতাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ফেসবুকে ফতোয়া ঝাড়তে। উইঘুরদের মত করে এইদেশেও কনসেনট্রেশান ক্যাম্প চালু করতে। কেন আমেরিকা এই দেশ ইনভেড করে ফান্ডামেন্টালিস্ট গুলারে মারে না তা নিয়ে কেঁদে বুক ভাসাইতে।
যে কাম শিয়ারা করলে শাহবাগী ক্ষিপ্ত হয় সেই একই কাম তো তারাও সমর্থন করে নিজের আদর্শের বেলায়।
যত দোষ শুধু ধর্ম ঘোষ।
(* এই ঘটনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন আবু ‘আম্মার ভাই। লিংক কমেন্টে।
★তারমানে এই না যে এভাবে পিটানো আমি সমর্থন করি। এক্ষেত্রে রুলিং আমি জানি না।)
( আম্মারুল হক)
ইরানে একটা মেয়েকে মোরাল পুলিশ হিজাব 'ঠিকমত' না পরায় পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া এটাকে বেশ ভালোভাবে হাইলাইট করেছে। ইরানের মেয়েরা প্রতিবাদ স্বরূপ হিজাব খুলে রাস্তায় উড়িয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছে। এদেশেও সেই হাইপ আছড়ে পড়েছে নিখিল বঙ্গ শাহবাগকূলে। তাদের ক্ষোভের কোপ এসে পড়ছে ইসলাম ও শরীয়াহর উপর। ধর্মান্ধতার বলি হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমার কাছে এই ঘটনা আদৌ নিরেট শরীয়াহ বেসিসে হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, শক্ত একটা ইমারাহ শরীয়াহ কায়েম করেও এই ঘটনাগুলোকে এভাবে ডীল করে না। শিয়া অধ্যুষিত ইরানে শিয়া বিপ্লব, যেটাকে তারা ইসলামী বিপ্লব বলে-সেটার আগে সাসানিদদের কোনো এরকম ইসলামিক মাইন্ড সেটআপ থেকে হিজাবের মোরাল কোড ছিল না। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে তারা যে মোরাল কোড তৈরী করেছে সেটা শরীয়াহর চেয়ে তাদের রীতিনীতি বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
যেমন, মালালাহ ইউসুফজাইও কিন্তু ওড়না পরে। এমনকি তাকে একবার সাক্ষাৎকার নিতে কোনো এক সাংবাদিক এলে ছবি তোলার আগে সে খালি মাথায় ছিল। পরে ওড়না পরে নেয়। জানতে চাওয়া হলো, সে কেন ওড়না পরছে? তার স্পষ্ট উত্তর ছিল, এই ওড়না পরা তার ঐতিহ্যগত ব্যাপার। সে পাকিস্থানের খাইবার পাখতুনখোয়ার যে গোত্র থেকে এসেছে, সেখানকার মেয়েদের ওড়না পরার চল আছে। সেহিসেবে সে পরে। তো এখন মালালাহ কি শরীয়াহ মেনে ওড়না পরে বলতে হবে? কেন তাকে ধর্ম ছেড়ে ওঠতে না পারার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় না?
আবার প্রাচীন হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ ও শিখদের মধ্যে মেয়েদের ড্রেসকোড আছে। যেখানে তারা নিজেদেরকে একেবারে ঢেকে রাখে। শিখ নারীরা ঘোমটা টেনে দেয় মুখের উপরেও। কিছু ব্রুটাল সিস্টেমও আছে।
আপনার মতামত কী?
শাহাবাগীদের কান্দাকান্দি দেখতে দেখতে জীবন শেষ
উত্তরমুছুন