পারলে জবাব দে (৩)
অনেক আগের একটি লাইভে নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল;প্রশ্নঃ আচ্ছা আসিফ ভাই! আপনারা তো মুক্ত স্বাধীনতায়, যৌন স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ব্যক্তিগত ভাবে যার যা ইচ্ছা, তাই করতে পারবে। ধরুন, কোন নাস্তিক একটা কুকুরের সাথে সেক্স করতে চাচ্ছে। এখন তার সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কী?
- আসলে মুক্ত স্বাধীনতা মানেই যে, 'যার যা ইচ্ছা করতে পারবে' ব্যাপারটা এরকম নয়! প্রত্যেকের রাইট দেওয়াই হলো এর উদ্দেশ্য। সুতরাং একজন নাস্তিকের যেমন স্বাধীনতা আছে। ঠিক তেমনি একটি কুকুরেরও আছে। অতএব এখানে যেহেতু ককুরের কন্সেন্ট নেওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু কুকুরের সাথে সেক্স করা যাবে না।
- আচ্ছা! পশুর অনুমতি না নিয়ে তার সাথে সেক্স করলে যদি সেটা মুক্ত স্বাধীনতার পরিপন্থী কাজ হয়। তাহলে বিভিন্ন পশু -পাখির অনুমতি না নিয়ে জবাই করে খাওয়াতে কি তাদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা হলো না!?
- আমি জানতাম আপনি এই প্রশ্নটি করবেন। এই প্রশ্নটি আসলেই যৌক্তিক। কেন আমরা পশু-পাখি খাচ্ছি! তারা তো আমাদেরকে তাদের জীবন নেয়ার রাইট দেয়নি! তাহলে কি আমরা বরবর জাতী নই! আসলে আমাদেরকে ছোট বেলা থেকেই এতে অভ্যস্ত করা হয়েছে। যার কারণে এগুলো আমাদের পাকস্থলীর জন্য আবশ্যক হয়ে গেছে। তবে আমরা মানবতাবাদীরা এতে ভিষণ লজ্জিত। আমরা চেষ্টাও করছি এ বিষয়টাকে ওভারকাম করতে। এমনকি আমরা বিভিন্ন সাইন্টিস্টদের সাথে কথাও বলেছি যে এমন কোন খাবার,মেডিসিন আবিষ্কার করা হোক যেগুলো এর স্থলাভিষিক্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে তাদের উপস্থিত কথোপকথন এতটুকুই ছিল। তবে অনুপস্থিত আরো কিছু কথা আছে।
লক্ষ করুন, কোন প্রণীর অনুমতি ছাড়া তার জীবন নেওয়া তো দুরের কথা তাকে ছোঁয়াও মুক্ত স্বাধীনতার পরিপন্থী। আর প্রাকৃতিক ভাবেই যেহেতু তাদের কন্সেন্ট নেওয়া সম্ভব নয়। সেহেতু নাস্তিকরা এক প্রকার ধরেই নিয়েছে। তাদেরকে ছোঁয়ার অধিকারও আমাদের নেই।
আমরা স্বাধীনতার বিরুদ্ধলোক নই। আমাদের ধর্মেও আছে অপার স্বাধীনতা। তবে সেটার একটা বুদ্ধিভিত্তিক লিমিটেইশন অবশ্যই আছে। কারণ এটা মানব মস্তিষ্ক প্রসূত নয়।
নাস্তিকরা আনলিমিটেড স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমনি এমনি নয়! ধর্মের সাথে টক্কর দিতে হবে যে। ধর্ম এক কদম বাড়লে; তাদের যে দুই কদম 'সো' করতে হবে। না হয় দলবদল হবে কী করে!
তাদের এই মানবরচিত মানবতার সূত্র যে কতটা প্রকৃতি বিরুদ্ধ সেটার ভূমিকা তুলে ধরছি। আশা করি জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
আসিফ ভাই অভিযোগের স্বরে বললেন ছোট বেলা থেকেই নাকি আমাদের পাকস্থলীকে পশুর মাংসে অভ্যস্ত করা হয়েছে। বুঝলাম না! তিনি কি খাদ্যের এই বিরাট অংশটাকে পুষ্টির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় মনে করলেন। অথচ এর অভাবজনিত কত রোগ সম্পর্কে আমরা জেনেছি।
যাইহোক পশুর মাংস না খেয়েও তো মানুষ বাঁচে! মেনে নিলাম। তবে এক্ষেত্রে দুধ আর ডিমের মতো যেগুলো তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ সেগুলো অনুমতি না নিয়ে খাওয়া উচিত হবে কিনা জানা দরকার। কারণ অন্যের ব্যক্তিগত কোনকিছু আত্মসাৎ করার রাইটও তো তারা আমাদের দেয় নি। ভেগানরা তো এ নীতি-ই মেনে থাকে। অর্থাৎ তারা দুধ আর ডিম খাওয়াকেও বৈধ মনে করে না।
প্রাণী হত্যা ত্যাগে খাদ্যের এই অংশটুকু না হয় আমরা বাদই দিলাম। ফলমূল আর নিরামিষ খেয়েই না হয় বাঁচব। কিন্তু সমস্যা হলো! উদ্ভিদেরও তো প্রাণ আছে। আছে অনুভূতি। একটি প্রণীর প্রায় সকল বৈশিষ্টই তো আছে তাদের। দুদিন আগেই দ্যা ডেইলি স্টারে 'গাছ কান্নাও করে' শিরোনামে একটা আরটিক্যাল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে; গাছের শুধু যে প্রাণ আছে, তাই নয় গাছেরা কান্নাও করে। [১]
সুতরাং তাদের হত্যা করা কি মুক্ত স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়? ধান চাষ, গম চাষ, সরিষা ইত্যাদি এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত খাদ্য ও অর্থনিতির কেন্দ্রবিন্দু কি আমাদের ত্যাগ করতে হবে? আর আসিফ ভাই যে বিকল্পীয় মেডিসিনের কথা বলেছেন। সেটাও তো তৈরি হবে এই উদ্ভিদ-প্রাণী থেকে।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমি অন্তত ফলমূলকে মুক্ত স্বাধীনতার আওতার বাহিরে আনতে চেয়েছিলাম । কিন্তু না! এও অসম্ভব! ফলমূল ছিড়তে গেলে তো গাছের ব্যথা অনুভব হয়। এরও রাইট আমাদের নেই। অতএব অনুমতি নেওয়া অপরিহার্য।
বিজ্ঞানে আমরা পড়েছি খাদ্যশৃঙ্খল, খাদ্যজাল (প্রণীদের পরস্পরীয় ভক্ষণ) নিয়ে। এর সম্পর্কে তাদের (বিজ্ঞানীদের) বক্তব্য, খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজাল যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় নাস্তিকদের মুক্ত-স্বাধীনতা রক্ষার্থে, তাহলে একটা পরিবেশ কখনোই টিকে থাকবে না। কোন প্রাণীই যদি বেঁচে না থাকে! তাহলে এই অতিরিক্ত স্বাধীনতা 'আমার মনে হয় না' কোন প্রাণীর কাছেই যুক্তিযুক্ত ঠেকবে!!
পরিশেষে বলতে চাই, নাস্তিকরা নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে "আনলিমিটেড স্বাধীনতার" যেই ঝলক দেখায় তার পরিসমাপ্তি যে এত করুন। সেটা হয়তো কখনো ভাবেনি তারা। এটাই হলো মানব রচিত ও স্রষ্টা কর্তৃক চিন্তার ফারাক।
নাস্তিক-মুক্তমনাদের নিকট আমাদের প্রশ্ন রইল; মানুষ কী খেয়ে প্রাণ বাঁচাবে ? আপনারা বর্তমানে কী খাচ্ছেন? আর ভবিষ্যতে কী খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করলেন?
রবিউল ইসলাম।
লেখক ও গবেষক, সত্যমনা ব্লগ।
তথ্য সূত্র:
[১] The daily star বাংলা: সোমবার এপ্রিল ৩, ২০২৩। 'গাছ কান্নাও করে।'
COMMENTS