আহলে কুরআন নামধারীদের মুখোশ উন্মোচন_১
'আহলে কুরআন' কি চমৎকার নাম। আরবি শব্দ 'আহলুন' মানে ওয়ালা বা পরিবার। 'আহলুল কুরআন' যার অর্থ কুরআনওয়ালা বা কুরআনের পরিবার। ভাবা যায় , কি চমৎকার নাম। কে না চায় কুরআনওয়ালা হতে ! সবাই তো কুরআনওয়ালা হতে চায়!! কিন্তু যদি এমন হয় কেউ কুরআনের বিরুদ্ধে চলে। কুরআনের বিপরীতে আমল করে। আর নিজেকে বলে আহলে কুরআন বা কুরআনওয়ালা। তাহলে তাকে কী বলা হবে। নিশ্চয়ই তাকে ভণ্ড বলা হবে। প্রতারক বলা হবে।
আরো যদি এমন হয় সে সরাসরি কুরআনের অসংখ্য আয়াতের বিরোধিতাকারী। এমনকি সে কুরআনের এমন ব্যাখ্যা দাঁড় করান যা নবী (সা.), ছাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও বড় বড় মুফাস্সিরগণ করেননি। নিজের মনগড়া কুরআনের ব্যাখ্যা করে। তারপরও কি তার আহলে কুরআন বা কুরআনওয়ালা নাম রাখার সুযোগ আছে ? হ্যাঁ, এরপরও যে আহলে কুরআন নাম ধারণ করে বসে আছে সে হলো বর্তমান নামধারী আহলে কুরআন।
"আহলে কুরআন নামধারীদের কুরআনের অপব্যাখ্যা __(১)
{وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ}
( القمر-١٧)
আল্লাহর বাণী:
আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণের কেউ আছে কি?
সুতরাং কুরআনকে যেহেতু আল্লাহ সহজ করেছেন। সেহেতু রাসূল সা. বিভিন্ন আয়াতে যে ব্যাখ্যা করেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা. থেকে যেভাবে কুরআন বুঝেছেন আমরা সেভাবে বুঝবো না। আমরা আমাদের মনমতো বুঝবো কুরআনকে"
এটাই হলো তাদের প্রথম অপব্যাখ্যা ও চালাকির সূচনা। এই আয়াতের অপব্যাখ্যা করে তারা রাসূল সা. এর সকল হাদিসকে অস্বীকার করে৷
জবাব:
﴿ هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
[ الجمعة: 2]
"তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন‘কিতাব ও হিকমাত। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।"
(সূরা আল-জুমুআ)
এই আয়াত থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল সা. এর কাজের তালিকা দেয়া হচ্ছে।
এক.
তিনি উম্মতের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করবেন।
দুই.
তিনি উম্মতকে পবিত্র করবেন।
তিন.
তিনি কিতাব ( কুরআন) ও হিকমত শিক্ষা দিবেন।
আচ্ছা এবার বুঝুন, প্রথমে বলা হয়েছে কুরআন তিলাওয়াত করবেন। আবার তিন নাম্বারে বলা হচ্ছে কুরআন শিক্ষা দিবেন। শুধু মাত্র কুরআন উম্মতের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই যদি রাসূল সা.এর দায়িত্ব হতো তাহলে কেন আবার কুরআন শিক্ষা দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট কুরআন শুধু উম্মতের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই দায়িত্ব ছিলো না। শিক্ষাও দিতে হবে। আর শিক্ষা দিতে হলে অবশ্যই আগে বুঝতে হবে। এরপর শিখাতে হবে।
এখন রাসূল সা. কিভাবে কুরআন বুঝেছেন। কিভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। সেটা আমাদের জানতে হবে। এবং সেভাবেই কুরআন শিখতে হবে এবং বুঝতে হবে।
কিন্তু নামধারী আহলে কুরআনরা রাসূল কিভাবে শিখিয়েছেন। কিভাবে বুঝিয়েছেন সেটা গ্রহণ করবে না। তারা যেভাবে বুঝবে সেটাই 'আসল বুঝ'।
আল্লাহর বাণী
(و َ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْن)
(হে নবী!) আমি আপনার প্রতি ‘আযযিকর’ নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেইসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। -সূরা নাহল (১৬) : ৪৪
এই আয়াতে রাসূল সা.কে কুরআনুল কারীমকে 'ব্যাখ্যা' করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নামধারী আহলে কুরআনরা রাসূল সা.এর ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করে না। তারা নিজে যেটা ব্যাখ্যা করবে সেটাই সঠিক৷ সেটাই 'আসল ব্যাখ্যা'।
. আল্লাহ অবশ্যই কুরআনকে সহজ করেছেন উপদেশ গ্রহণের জন্য। তার মানে কি কুরআন সঠিকভাবে শিখতে হবে না ? আহলে কুরআন নামধারীরা যদি মনে করে কুরআনকে সহজ করা হয়েছে তাই এটা আর শিখার প্রয়োজন নাই । তাহলে তারা কুরআন শিখে কেন? শিখার জন্য অন্যের দারস্থ হয় কেন? কুরআন তো সহজ করা হয়েছে। সুতরাং জীবনের প্রথম কুরআন খুলে গড়গড় করে পরলেই তো হয়ে যায়।
কিন্তু না। এটা সম্ভব না। এর মানে বুঝতে হবে কুরআন সহজ। এই সহজ মানে কুরআন মুখস্থ রাখতে সহজ। কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করা সহজ।
আর সহজ এর অর্থ কী। বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ খুললে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। তাফসিরে জালালাইন__
«ولقد يسرنا القرآن للذكر» سهلناه للحفظ وهيأناه للتذكر
((আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করেছি)) আমি কুরআনকে মুখস্থ রাখার জন্য সহজ করেছি এবং উপদেশ গ্রহণের জন্য উপস্থাপিত করেছি।
সহজের অর্থ ওটা নয় যেটা আহলে কুরআন নামধারীরা বুঝেছে।
চলবে...
সত্যমনা লেখক
আহমাদ আব্দুর রাজ্জাক
Ahmad Abdur Razzak
সত্যমনা ব্লগ।
সুন্দর ভালে তুলে ধরলেন ধন্যবাদ আপনাদেরকে
উত্তরমুছুন